রিজিক সম্পর্কে হাদিস | রিজিক কী | রিজিক কত প্রকার

রিজিক সম্পর্কে হাদিস অসংখ্য হাদিসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। আপনারা সকলেই জানেন জমিনের প্রতিটি প্রাণী আল্লাহর দেওয়া রিজিক ভোগ করে। এছাড়া মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী রয়েছে। ঈমানদার মুসলিম হিসাবে রিজিক সম্পর্কে হাদিস ও রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

আমরা রিজিক বলতে শুধু খাবারকেই বুঝিয়ে থাকি। কিন্তু আমাদের সামগ্রিক জীবনযাপনের সাথে জড়িত উপকরণগুলোকে একত্রে রিজিক বলা হয়। আজ এই পোস্টে আপনারা রিজিক সম্পর্কে হাদিস, রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী, রিজিক নিয়ে হাদিসে কুদসি এবং রিজিক সম্পর্কিত যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই পুরো পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

রিজিক সম্পর্কে হাদিস

রিজিক সম্পর্কে হাদিস

রিজিকের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) স্পষ্ট বলেছেন কেউ তার নির্ধারিত রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে না। রিজিক সম্পর্কে হাদিস রয়েছে বেশকিছু। তার মধ্যে একটি হলো, রাসূল (সাঃ) বলেন,

“হে মানুষ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ধনসম্পদ সংগ্রহে উত্তম পন্থা অবলম্বন করো। কেননা কেউ তার রিজিক পরিপূর্ণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না। যদিও তা অর্জনে বিলম্ব হয়” [ ইবনে মাজাহ]।


হজরত ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত, আরও একটি রিজিক সম্পর্কে হাদিস হলো নবী কারিম (সাঃ) বলেন “তোমরা যদি আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করতেন। যেমনভাবে তিনি পাখিদের রিজিকের ব্যবস্থা করে থাকেন। তারা তো সকালে খালি পেটে ক্ষুধা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়,

আবার শেষ বিকেলে ভরা পেটে বাসস্থানে ফিরে আসে” [তিরমিজি, হাদিস নং – ২৩৪৪]। এছাড়া, নবীজি (সাঃ) রিজিকের ফজিলত নিয়ে আমাদের অনেক দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যা আমাদের মেনে চলা ও তার উপর আমল করা অবশ্য কর্তব্য।

বিখ্যাত বুজুর্গ হাসান বসরি (রহ.) বলেছেন, আমি কোরআনের নব্বই জায়গায় পেয়েছি, আল্লাহতায়ালা বান্দার রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। কেবল এক জায়গায় পেয়েছি, ‘শয়তান তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ভয় দেখায়।’ -সূরা বাকারা: ২৬৮

আরো পড়ুন ,…..

GIRL NAMES | অর্থসহ মেয়ে শিশুদের ইসলামিক নাম। 500 +

তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে আদায় করবেন

নামাজের দোয়া ও সূরা (বাংলা অনুবাদ,অর্থসহ আরবি)

ইসলামিক উক্তি | ALLAH LOVE QUOTES 140+

রিজিক বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কোরআন-হাদিসের বর্ণনা

কিছু কারণে বান্দার রিজিক তথা জীবিকা বৃদ্ধি পায়। ওইসব কারণগুলো হচ্ছে-

এক. একনিষ্ঠভাবে এক আল্লাহর ইবাদত ও সৎকর্ম করা। -সূরা আন নাহল: ৯৭

দুই. বেশি পরিমাণে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করা ও ইস্তেগফার পড়া। -সূরা নুহ: ১০-১২

তিন. সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করে চলা। -সূরা আত তালাক: ২

চার. বেশি বেশি বৈধ রিজিকের জন্যে দোয়া করা। -সূরা বাকারা: ১৮৬

পাঁচ. দৃঢ়তার সঙ্গে আল্লাহর ওপর ভরসা করা। -সূরা আত তালাক: ৩

ছয়. অসহায় দরিদ্রদের সাহায্য করা। -সহিহ বোখারি: ২৮৯৬

সাত. হজ ও উমরা করা। -সুনানে তিরমিজি: ৮১০

আট. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। -সহিহ বোখারি: ২০৬৭

নয়. সকাল সকাল ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। -সুনানে আবু দাউদ: ২৬০৬

দশ. ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। -সহিহ মুসলিম: ৬৫৭

একমাত্র যে কারণে বান্দাকে রিজিক থেকে বঞ্চিত রাখা হয় তা হচ্ছে গোনাহের কাজে লিপ্ত থাকা। -সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯০

উল্লেখ্য হারাম উপার্জন দিয়ে গঠিত শরীরের কোনো ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না এবং ওই শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না। -সিলসিলা সহিহাহ: ২১২

অতএব কোনো ধরনের হতাশা নয়, তাকদিরে আমাদের জন্য যতটুকু বরাদ্দ আছে, ততটুকু আমরা পাবোই, এটাই আল্লাহর ওয়াদা। আমাদের কাজ শুধু চেষ্টা করে যাওয়া। যে বিষয়ে আল্লাহ হুকুম করেছেন- তা মানা, আর যে বিষয়ে আল্লাহ নিষেধ করেছেন, তা থেকে নিচেকে বাঁচিয়ে রাখা। এসব কাজের অন্যতম হলো-

রিজিক কী | রিজিক কত প্রকার

আমাদের পুরো জীবনের সকল কর্মকান্ড যা দ্বারা নির্ধারিত তাই হলো রিজিক। আমরা কি খাবো, কি পরবো, কি আয় করব, কোথায় যাব তথা জীবনের প্রতিটি কর্মকাণ্ড আল্লাহতায়ালা কতৃক নির্ধারিত।

মহান আল্লাহর দ্বারা লিখিত রিজিক থেকে আমরা বিন্দুমাত্র বঞ্চিত হবো না আবার এর চেয়ে বেশিও কিছু পাবো না। সুতরাং, রিজিক জিনিসটা এতটাই শক্তিশালী। রিজিকে বিশ্বাস করাও তাই মুমিন ব্যক্তির কাজ। রিজিক সম্পর্কে হাদিসগুলোতে রিজিক কত প্রকার সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

ইসলামে রিজিকের ধারণা অত্যন্ত সুপ্রসারিত। রিজিক মূলত ২ প্রকার: ১) ধন সম্পদের রিজিক এবং ২) অন্তর আত্মার রিজিক। ব্যক্তির মৌলিক সম্পদগুলো ব্যতীত আরও যে সকল প্রকারের রিজিক রয়েছে তা হলো, ১) ঈমান, ২) সুস্থতা, ৩) ইলমে দ্বীন, ৪) নেককার স্ত্রী, ৫) নেককার সন্তান, ৬) ফিকহ্ ইত্যাদি। মোটকথা আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে কল্যাণকর করে এমন সমস্ত উপকরণই ইসলামের পরিভাষায় রিজিক।

রিজিক সম্পর্কে একটি হাদিস হলো: মহানবী সাঃ বলেন, “রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্ব নির্ধারিত ও বণ্টিত, তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি ৪০ দিন তার মায়ের গর্ভে থাকে। তারপর ৪০ দিন লাল জমাট রক্ত রূপে রূপান্তরিত হয়। তারপর ৪০ দিনে গোশতের টুকরোর রূপ ধারণ করে।

অবশেষে আল্লাহতায়ালা ফেরেশতাকে পাঠান। তখন সে তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেয়। অতঃপর ফেরেশতাকে ওই গর্ভস্থ শিশুর ব্যাপারে চারটি বিষয় চূড়ান্তরূপে লিখতে আদেশ করা হয়। যথা তার রিজিক, মৃত্যু ও আমল” (মুসলিম – ২৬৪৩)।

রিজিক কমবেশি কেন হয়?

আল্লাহ তায়ালা জীবন-উপকরণ দান করেন। মানুষ নিতেও পারে না দিতেও পারে না, মাধ্যম হতে পারে মাত্র।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, জমিনে বিচরণকারী যত প্রাণী আছে, সবার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর ওপরে। (সুরা হুদ: আয়াত ৬)

রিজিক মানে শুধু খাদ্য সামগ্রী নয়, বরং জীবন-উপকরণের সবকিছু। অর্থাৎ সব প্রাণীর জীবন-উপকরণের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই গ্রহণ করেছেন।

আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি দয়ালু, যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন, তিনি প্রবল পরাক্রমশালী। ( সুরা শুরা: আয়াত ১৯)

রিজিক কমবেশি কেন হয়? কেউ পায় কম, কেউবা বেশি। কেউ ধনী হয়, কেউবা গরীব। এর উত্তরও আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে দিয়েছেন ; আল্লাহ তায়ালা যদি তার সব বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা (রিজিক) সে পরিমাণ অবতীর্ণ করেন। (সুরা শুরা: আয়াত ২৭)

অপচাকরি-বাকরি করার দরকার কী! আল্লাহ তায়ালার ওপরে তাওয়াককুল করলাম, আল্লাহ আমাকে আহার্য দান করবেন।

রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী

প্রিয় পাঠক, আশা করি পুরো পোস্ট পড়ে রিজিকের যাবতীয় ফজিলত সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছেন। রিজিক যে একমাত্র আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক নির্ধারিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

মহান আল্লাহ আমাদের রিজিক সম্পর্কে হাদিসগুলো এবং রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণীগুলো মেনে সুন্দর জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুন। পোস্টটি ভালো লাগলে সকলের কাছে শেয়ার করে দিন।

Tag;

রিজিক কত প্রকার,
রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত,
রিজিক সম্পর্কে আলোচনা,
রিজিক নিয়ে চিন্তা,
রিজিক নামের আরবি অর্থ কি,
রিজিক meaning in english,
রিজিক সম্পর্কে হাদিস,
রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী,

রিযিক সম্পর্কে কি বলা আছে ইসলামে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *